বিশ্বব্যাপী নাগরিক স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা অলাভজনক সংস্থা সিভিকাসের 'পিপল পাওয়ার আন্ডার অ্যাটাক ২০২২' শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে 'অবদমিত' ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের বিচারবিভাগীয় হয়রানি, হুমকি ও হামলার ঘটনা বেড়েছে।

এছাড়া, কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে সমালোচকদের দমন করা হচ্ছে। রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতা ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ফ্রিডম হাউসের ২০২৪ সালের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশকে 'আংশিক স্বাধীন' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অধিকারচর্চা ও নাগরিক স্বাধীনতায় বাংলাদেশের সম্মিলিত স্কোর ৪০, যার মধ্যে রাজনৈতিক অধিকারচর্চার ক্ষেত্রে স্কোর ১৫ এবং নাগরিক স্বাধীনতায় ২৫। এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান টানা পঞ্চমবার অপরিবর্তিত রয়েছে। জাতিসংঘের উদ্বেগ জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো বাংলাদেশে নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব হওয়ার লক্ষণ, ক্রমবর্ধমান বৈষম্য এবং নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, 'বিশ্বব্যাপী নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব হওয়া একটি বড় উদ্বেগ। কিন্তু, গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে উচ্চাকাঙ্ক্ষী একটি দেশের জন্য এটি ভালো কিছু নয়।' বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন বাম গণতান্ত্রিক জোটের এক সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান সরকারকে 'ফ্যাসিবাদী' আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, সভা-সমাবেশ-মিছিলে বাধাদান করে সরকার নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করছে।

সরকারের দুঃশাসন ও লুটপাটের কারণে জাতীয় ও জনজীবনে সংকট সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ, হয়রানি এবং গ্রেপ্তারের ঘটনা সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করছে। দুর্নীতির তথ্য প্রকাশের অভিযোগে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতায় মামলা করা হয়েছে, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচারহীনতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্যাতন, দুর্ব্যবহার ও গুমের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সন্ত্রাসবিরোধী এলিট ইউনিট র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে, যা বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করছে। সংখ্যালঘুদের অধিকার ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্য বাংলাদেশে গুরুতর সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। এ ধরনের বৈষম্য ও সহিংসতা নাগরিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের পরিপন্থী।

উপসংহার

বাংলাদেশে নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতার বর্তমান পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অধিকার এবং মানবাধিকার রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। সরকারের উচিত নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মানবাধিকার রক্ষা করা।

লেখকঃ ইউসুফ উদ্দিন রাকিব

ব্রাক ইউনিভার্সিটি

আইন বিভাগ