বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত: বর্তমান অবস্থা, আইন এবং বাস্তব ঘটনা

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধন করেছে। তবে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে, যা সমাধানের জন্য কার্যকর আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এই প্রবন্ধে আমরা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বর্তমান অবস্থা, প্রযোজ্য আইন এবং কিছু বাস্তব ঘটনার আলোকে এই খাতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব।

স্বাস্থ্য খাতের বর্তমান অবস্থা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু এবং নবজাতকের মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে। গড় আয়ু বেড়েছে এবং টিকাদান কার্যক্রমে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে ৪১,৪০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৩,৩৫৬ কোটি টাকা বেশি। তবে, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের পরিমাণ জাতীয় বাজেটের মোট ব্যয়ের তুলনায় এখনও কম।

২০২১-২২ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় ছিল মোট বাজেটের মাত্র ৪.৮ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতে প্রযোজ্য আইন বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫(ক) অনুচ্ছেদে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। এছাড়া, সরকার বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, ১৯৮২ সালের ড্রাগ কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স ও ২০১০ সালের ন্যাশনাল হেলথ পলিসি উল্লেখযোগ্য। তবে, আইন ও নীতিমালার কার্যকর বাস্তবায়নে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতি রোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বাস্তব ঘটনা স্বাস্থ্য খাতে চ্যালেঞ্জ ও উন্নয়নের উদাহরণ হিসেবে কিছু বাস্তব ঘটনা উল্লেখ করা যায়।

২০২৪ সালের আগস্ট মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর জানান, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। তিনি হাসপাতালগুলোর সেবার মান উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করেন এবং অভিযোগ বক্স স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান। অন্যদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানোম গ্যাব্রেয়াসুস ২০২৪ সালের মে মাসে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বিপুল সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

তিনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও, কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তিগত ব্যয় কমাতে এবং সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া, স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন, দুর্নীতি রোধ এবং সঠিক তদারকি নিশ্চিত করাও জরুরি।

উপসংহার

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতাও পাচ্ছে। তবে, আইন ও নীতিমালার কার্যকর বাস্তবায়ন, সঠিক তদারকি এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সমন্বিত প্রচেষ্টা ও দায়িত্বশীলতা অপরিহার্য।

ফেরদৌস ফুয়াদ ভূঁইয়া

ব্রাক ইউনিভার্সিটি

আইন বিভাগ